পাকিস্তান ট্যুরে কেন যাবেন? পাকিস্তান ট্যুরের নিয়মাবলী
সম্প্রতি বাংলাদেশি পর্যটকদের মধ্যে পাকিস্তানে ভ্রমণের প্রতি আগ্রহের ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ- ভ্রমণ ব্যয়, সংস্কৃতির ভিন্নতা, ভিসা প্রক্রিয়ার সহজলভ্যতা এবং বিশেষ কিছু পর্যটন আকর্ষণের প্রভাব।
পাকিস্তান ট্যুরে কেন যাবেন?
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে ই-ভিসা আবেদনের সুযোগ করে দিয়েছে পাকিস্তান। অনলাইনে আবেদন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে ই-ভিসা।
ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সীমান্ত সম্পর্কের টানাপোড়েনও কিছু পর্যটকের ভারত বিমুখ হওয়ার কারণ। এর বিপরীতে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা অনেক পর্যটককে প্রভাবিত করছে।
পাকিস্তানে তুলনামূলক কম খরচে ভ্রমণ সুবিধা অনেক বাংলাদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করছে। খাবার, থাকা এবং স্থানীয় পরিবহন খরচ ভারতে ভ্রমণের তুলনায় অনেকটাই সাশ্রয়ী। বিশেষত তরুণ পর্যটক এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীরা এ কারণে পাকিস্তানকে পছন্দ করছেন।
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য পাকিস্তানের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। অনলাইনে আবেদন এবং দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক। অন্যদিকে, ভারতে ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় এবং কঠোর প্রক্রিয়ার কারণে অনেক পর্যটক ভিন্ন গন্তব্যে মনোযোগ দিচ্ছেন।
পাকিস্তানে রয়েছে ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। লাহোরের ঐতিহাসিক নিদর্শন, কারাকোরাম পর্বতমালা এবং হুনজা ভ্যালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক ভ্রমণ পিপাসুকে মুগ্ধ করছে। বিশেষত, যারা ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহী, তারা পাকিস্তানের বিভিন্ন মসজিদ, দুর্গ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করতে আগ্রহী।
আগের তুলনায় পাকিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের আন্তরিক আতিথেয়তা বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কাজ করছে। ভ্রমণকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানিদের উষ্ণ ব্যবহারের প্রশংসা করছেন, যা অন্যদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
পাকিস্তান ট্যুরের নিয়মাবলী
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াঃ
প্রথম ধাপেই অনলাইনে পাকিস্তানের ভিসা আবেদন করতে হবে। ভিসা আবেদনের লিঙ্ক নীচে কমেন্টস বক্সে দেয়া আছে। সহজেই ঘরে বসে বা কাছের কোনো কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করা যাবে। বর্তমানে ভিসা ফ্রি হওয়ায় কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই। আবেদন সম্পন্ন করার পর আপনি ই-ভিসা পেয়ে যাবেন।
টিকেট বুকিং:
ভিসা পাওয়ার পরেই টিকেট কনফার্ম করতে হবে। উত্তরাঞ্চল ঘুরতে চাইলে লাহোরকে বেছে নিন, কারণ ইসলামাবাদ বা করাচীর তুলনায় লাহোরের টিকেটের দাম তুলনামূলক কম। ঢাকা থেকে লাহোর রাউন্ড ট্রিপের টিকেটের দাম ৫৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। তাই নিজের সুবিধা অনুযায়ী কম খরচের একটি এয়ারলাইন্সের টিকেট বুক করুন।
Book a Cheap Flight for Lahore
লাহোর থেকে ইসলামাবাদ:
লাহোর এয়ারপোর্টে পৌঁছে সিটি বাস স্টেশনে যেতে হবে। এখান থেকে কোনো একটি বাসে উঠে ৫ ঘণ্টার জার্নি শেষে পৌঁছাবেন ইসলামাবাদে। বাস ভাড়া প্রায় ১ হাজার টাকা।
ইসলামাবাদে থাকা:
ইসলামাবাদে বিভিন্ন ক্যাটাগরির হোটেল রয়েছে, আপনার বাজেট অনুযায়ী একটি হোটেল বেছে নিন। ইসলামাবাদকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দরতম রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাই এখানে কিছুদিন অবস্থান করে শহরটি ঘুরে দেখা দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
Book a Cheap Hotel for Islamabad
কারেন্সি চেঞ্জিং:
লাহোরে পৌঁছানোর পর প্রথম কাজ হবে বাংলাদেশি টাকাকে রুপিতে কনভার্ট করা। ১০০ টাকা সাধারণত ১৯০ রুপি সমান, তবে কনভার্টের সময় কিছুটা কম পাওয়া যেতে পারে।
প্রাথমিক থাকা/হোটেল বুকিং:
পাকিস্তানে যাওয়ার আগে বা পৌঁছে প্রথমে ১-২ দিন লাহোর বা ইসলামাবাদে থাকতে হবে। আপনি চাইলে আগেই অনলাইনে হোটেল বুক করতে পারেন, তবে অনলাইন বুকিং করা হোটেলগুলো সাধারণত ব্যয়বহুল হয়। পরিবারের সাথে থাকলে আগে থেকে হোটেল বুকিং করে রাখুন।
মূল ট্যুর:
ইসলামাবাদ থেকে শুরু হবে আপনার মূল ট্যুর। খাইবার পাখতুনখা, গিলগিট-বাল্টিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীরের যেকোনো অঞ্চল থেকে ঘুরতে পারবেন।
ট্যুরের পদ্ধতি:
- স্বাধীনভাবে: নিজের ইচ্ছামতো ট্যুর করতে পারেন, তবে খরচ কম হবে।
- ট্র্যাভেল এজেন্সী: একাধিক এজেন্সী আপনার জন্য গাইডসহ জিপ গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে। এতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সুবিধা বেশি।
খরচের বিবরণ:
পাকিস্তানে থাকা-খাওয়া ও অভ্যন্তরীণ যাতায়াত খরচ বাংলাদেশের মতো বা তার চেয়ে কম হতে পারে। তবে মূল খরচ হবে বিমান ভাড়া। অনুমান করা খরচ:
- ভিসা: ফ্রি
- ঢাকা-লাহোর বিমান ভাড়া: ৫৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা
- লাহোর-ইসলামাবাদ বাস ভাড়া: প্রায় ২/৩ হাজার টাকা
- ১৫-২০ দিন অবস্থানের জন্য আনুমানিক খরচ: ১৫-২৫ হাজার টাকা (হোটেল, খাবার, যাতায়াত ও ঘোরাঘুরি)
Book a Cheap Hotel for Lahore
ভ্রমণস্থল:
নর্থ পাকিস্তানে পর্যটন স্থানের অভাব নেই। কয়েকটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ:
- সোয়াত: কামরাট ভ্যালি, কালাম ভ্যালি, মহোদন্ড লেক
- হুনজা: হুনজা ভ্যালি, আতাবাদ লেক, বালতিত ফোর্ট
- স্কার্দু: সার্ফারাঙ্গা কোল্ড ডেজার্ট, কাচুরা লেক
- আজাদ কাশ্মীর: মুজাফফরাবাদ সিটি, নীলাম ভ্যালী
থাকা/হোটেল:
সব প্রধান পর্যটন অঞ্চলে আবাসিক হোটেল আছে, বিশেষ করে হুনজা এবং সোয়াতে হোটেলের পরিমাণ বেশি। স্কার্দুতে হোটেল কম। বড় হোটেলের লোকেশন অনলাইনেই পাওয়া যায়। আপনি চাইলে পোর্টেবল তাবু নিয়ে নিরিবিলি স্থানে থাকতে পারেন।
অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা:
- কারাকোরাম হাইওয়ে: পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম।
- বাবুসর পাস: বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সড়ক, যেখানে মেঘও আপনার নিচে দিয়ে বইবে।
সবশেষে বলতে বাধ্য হচ্ছি, সুইজারল্যান্ডের মতো জায়গায় ঘোরার খরচের তুলনায় পাকিস্তান ট্যুর অনেক সস্তা।
ধন্যবাদ সবাইকে, আশাকরি এই নির্দেশনা আপনার ট্যুরকে আরো সহজ ও আনন্দময় করে তুলবে।
আপনার মতামত শেয়ার করতে পারেন নীচের কমেন্ট বক্সে। আপনার সুচিন্তিত মতামত আপনাদের জন্য নতুন কোন তথ্যবহুল বিষয় নিয়ে আসতে আমাদের উৎসাহিত করবে।
Author
-
Founder & CEO, JustforBooking.com. With years of experience in the travel industry, W U Mahmud is the visionary founder and CEO of JustforBooking.com. Specializing in government and corporate tours, W U Mahmud has successfully navigated the dynamic landscape of travel, particularly focusing on providing seamless SOTO air ticketing and international hotel booking services. Under W U Mahmud's leadership, JustforBooking.com has become synonymous with reliability and excellence, ensuring every journey is memorable and stress-free. Passionate about travel and dedicated to client satisfaction, W U Mahmud continues to innovate and elevate the travel experience for all clients.
View all posts
পাকিস্তান e-visa আবেদনের লিঙ্কঃ
https://visa.nadra.gov.pk/e-visa/